বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৪ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের করা আপিলের রায় ঘোষণার জন্য আগামী ২৭ মে ২০২৫ তারিখ নির্ধারণ করেছে। আজ বুধবার আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ শুনানি শেষে এই দিন নির্ধারণ করে।
এটিএম আজহার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা, ধর্ষণ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (ICT) ২০১৪ সালে তাকে পাঁচটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড দেন। এরপর থেকেই তিনি কারাবন্দী এবং দণ্ড বাতিলের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন।
মামলার শুনানির সময় রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে দাবি করে, “এটিএম আজহার সরাসরি আল-বদর বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ১৯৭১ সালে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধে নেতৃত্ব দেন।” অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, "আজহার নির্দোষ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। বিচারিক প্রক্রিয়ায় যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপিত হয়নি।"
প্রধান বিচারপতি বলেন, “সব পক্ষের বক্তব্য ও উপস্থাপিত তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা রায়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ২৭ মে রায় ঘোষণা করা হবে।”
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এই মামলাকে "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত" বলে দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, গণজাগরণ মঞ্চ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে এই রায়ের দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে আসছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ ধরনের বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক মান অনুসরণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে।
এটিএম আজহারের রায় বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধবিষয়ক বিচারিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি একদিকে যেমন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচারের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন, অন্যদিকে জাতির বিচার ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা ও শক্তিমত্তার প্রতিফলন হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।